ভাব সম্মিলন|| বিদ্যাপতি|| একাদশ শ্রেণী
(sahajexam.in এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাসংসদ প্রবর্তিত নতুন পাঠ্যক্রম ও নতুন প্রশ্নকাঠামো (New Curriculum and Syllabus 2024) অনুসারে একাদশ শ্রেণির Semester-II-এর ছাত্রছাত্রীদের জন্য লিখিত আদর্শ মানের বিষয়বস্তু, প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হল। )
ভাব সম্মিলন
বিদ্যাপতি
“কি কহব রে সখি আনন্দ ওর।
চিরদিনে মাধব মন্দিরে মোর।।”
সখি, আমার আনন্দের সীমা
আর তোমাকে কি বলব (অর্থাৎ আমার আনন্দের সীমা নেই) কারণ মাধব চিরদিনই আমার গৃহে অবস্থান
করছেন।
“পাপ সুধাকর যত দুখ দেল।
পিয়া মুখ-দরশনে তত সুখ
ভেল।।”
পাপী চন্দ্র (চাঁদ)রাধাকে (বিরহ অবস্থায়)
যে পরিমাণ দুঃখ দিয়েছে, আজ প্রিয় মুখ দর্শন করে রাধা তত সুখই লাভ করলেন।
“আঁচর ভরিয়া যদি মহানিধি
পাই।
তব হাম পিয়া দূর দেশে না
পাঠাই।।”
রাধাকে যদি কেউ আঁচল
ভরেও (আঁচর ভরিয়া) মহারত্ন দান করে, তবুও তিনি তাঁর প্রিয়তমকে আর দূর দেশে পাঠাবেন
না।
“শীতের ওঢ়নী পিয়া গীরিষির
বা।
বরিষার ছত্র পিয়া দরিয়ার
না।।”
রাধার কাছে তাঁর প্রিয় শীতের ওড়না, গ্রীষ্মের বাতাস, বর্ষার
ছাতা, আর অকূল সমুদ্রের তরণী।
“ভণয়ে বিদ্যাপতি শুন বরনারি।
সুজনক দুখ দিবস দুই-চারি।।”
বিদ্যাপতি ভণিতায় বলছেন;
সুন্দরি শোন, যে সুজন —সংসারে তার দুঃখ মাত্র দু'চার দিনের, অর্থাৎ
ভাল লোককে দুঃখ বেশিদিন সহ্য করতে হয় না।
কবিতার বিষয়বস্তু:
কবিতাটিতে
কৃষ্ণের সঙ্গে মিলনে উল্লসিতা রাধার আনন্দ উচ্ছ্বসিত হয়ে উঠেছে। সখীকে সম্বোধন করে
রাধা বলেছেন, তাঁর আনন্দের সীমা নেই। কারণ মাধব অর্থাৎ কৃষ্ণ চিরদিনই তাঁর গৃহে অবস্থান
করছেন। বিরহ অবস্থায় রাধাকে বাঁধ-ভাঙা চাঁদের হাসি যে পরিমাণ দুঃখ দিয়েছে, আজ প্রিয়মুখ
দর্শনে তিনি তত সুখই লাভ করলেন। রাধাকে যদি কেউ আঁচল ভরে মহারত্ন দান করেন, তবুও তিনি
তাঁর প্রিয়তমকে আর দূরদেশে পাঠাবেন না। কৃষ্ণকে আর দূর দেশে না পাঠানোর দৃঢ় সংকল্প
থেকেই পরিষ্কার হয়ে ওঠে পদটি ভাবোল্লাসের। কৃষ্ণের সঙ্গে নিজের সম্পর্ককেও রাধা তাঁর
অস্তিত্ব রক্ষার অনিবার্য প্রয়োজনের সঙ্গে তুলনা করে নতুন মাত্রা দান করেছেন। কৃষ্ণ
তাঁর কাছে শীতের আচ্ছাদন অর্থাৎ ওড়নার মতো কারণ ওড়না যেমন শীতের সময় আমাদের শীত
নিবারন করে তেমনই রাধার কাছে কৃষ্ণও সেইরূপ, গ্রীষ্মের দাবদাহে বয়ে যাওয়া বাতাস আকুলতা বাড়িয়ে তোলে, বর্ষাকালের ছাতা বৃষ্টির হাত থেকে রক্ষা কর, আর অকূল সমুদ্রের কিনারায় দাঁড়িয়ে থাকা দিশাহারা যাত্রীকে কোনো নৌকা এসে তার
গন্তব্যে পৌঁছে দেয়, কৃষ্ণও রাধার
কাছে সেইরূপ অপরিহার্য। এখানেও রাধার একাগ্র-তন্ময় কৃষ্ণপ্রেমের
অপূর্ব ব্যাখ্যা ভাবসম্মিলনের পদকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে তুলেছে। এই উপমানের মালা ব্যবহার
করেও কবি রাধার প্রেমকে যেন মর্ত্যচারী করে তুলেছেন। কৃষ্ণের প্রেম রাধার কাছে ভাববিলাস
মাত্র নয়, তাঁর অস্তিত্ব রক্ষার অপরিহার্য প্রয়োজন, তাঁর জীবনযাপনের ও জীবন ধারণের
অনন্য উপায়। ভনিতায় কবি বিদ্যাপতি বলেছেন
যে নারীশ্রেষ্ঠা ও ভালো মানুষ তাকে বেশি দিন দুঃখ কষ্ট ভোগ করতে হয় না।