বিহারীলাল চক্রবর্তী
সাহিত্য জীবন: বিহারীলাল চক্রবর্তী আধুনিক গীতি কাব্যের প্রথম সচেতন কবি। রোমান্টিক গীতিকবিতার যৌবনমুক্তি বিহারীলালের হাতেই।রবীন্দ্রনাথ তাঁর কাব্যগুরু বিহারীলালকে ‘ভোরের পাখি’ আখ্যায় ভূষিত করেছেন। তিনি ‘পূর্ণিমা’ নামে একটি পাক্ষিক সাহিত্য পত্রিকার সম্পাদক ছিলেন। তার বেশিরভাগ কবিতা প্রকাশিত হয়েছিল ‘পূর্ণিমা’‘সাহিত্য সংক্রান্তি’‘অবোধবন্ধু’ পত্রিকায়। বিহারীলালের প্রথম প্রকাশিত গ্রন্থ হল ‘স্বপ্ন দর্শন'(১৮৫৮) নামে একটি গদ্যগ্রন্থ। পূর্ণিমা পত্রিকায় এই গ্রন্থ রচনা করেন। বিহারীলালের কাব্যগ্রন্থ গুলো হল- ‘সঙ্গীত শতক’(১৮৬২), ‘বঙ্গসুন্দরী’(১৮৭০), ‘নিসর্গগ সন্দর্শন’(১৮৭০), ‘বন্ধুবিয়োগ’(১৮৭০), ‘প্রেম প্রবাহিনী’(১৮৭০), ‘সারদামঙ্গল ’(১৮৭৯), ‘সাধের আসন’(১৮৮৯)। অপ্রকাশিত কবির অন্যান্য রচনা ‘বাউলল বিংশতি’***, ‘দেবরানী’(১৮৮২), ‘ধুমকেতু’(১৮৯৯), ‘ ‘কবিতা ও সংগীত’, ‘মায়া দেবী’।
সঙ্গীত শতক: বিহারীলালের রচিত দ্বিতীয় গ্রন্থ ‘সঙ্গীত শতক’প্রকাশিত হয় ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে। বিহারীলালের এটি প্রথম কাব্যগ্রন্থ। গ্রন্থটি একশত বাংলা গানের সমষ্টি। সংগীত শতক গ্রন্থটি দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুরের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
বঙ্গসুন্দরী: বিহারীলালের বঙ্গসুন্দরী কাব্য প্রকাশিত হয় ১৮৭০ খ্রিস্টাব্দে। একটি দশটি স্বর্গে বিন্যস্ত। এই দশটি সর্গ হল যথাক্রমে-উপহার, নারীবন্দনা, সুরবালা, চিরপরাধিনী, করুণা সুন্দরী, বিষাদিনী, প্রিয় সখি, বিরহিনী, প্রিয়তমা, অভাগিনী। প্রথম সংস্করণে নয়টি স্বর্গ ছিল, দ্বিতীয় সংস্করণে সুরবালা সর্গটি সংযোজিত
হয়। প্রত্যেকটি স্বর্গের প্রারম্ভে একটি করে উদ্ধৃতি রয়েছে। উদ্ধৃতিগুলি ভবভূতি কালিদাস ভারবি ও বায়রনের।
নিসর্গ সন্দর্শন: কাব্যটি ধারাবাহিকভাবে ‘অবোধবন্ধু’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই কাব্য সাতটি সর্গে রচিত।সর্গ গুলি হল-চিন্তা, সমুদ্রদর্শন, বীরাঙ্গনা, নভোমন্ডল, ঝটিকার রজনী, ঝটিকা সম্ভোগ, প্রভাত।
বন্ধু বিয়োগ: বন্ধুবিয়োগ প্রথমে পূর্ণিমা পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। চারটি স্বর্গে কবি বিহারীলাল তার চারজন বন্ধু (পূর্ণচন্দ্র, কৈলাস, বিজয় ও রামচন্দ্র) এবং প্রথমা স্ত্রী অভয়ার বিয়োগ ব্যথা ব্যক্ত করেছেন। চারটি সর্গের নাম হল-পূর্ণ-বিজয়, কৈলাস, সরলা, রামচন্দ্র।
প্রেম প্রবাহিনী: প্রেম প্রবাহিনী অবোধ বন্ধু পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। পতন, বিরাগ, বিষাদ, অন্বেষণ, নির্বাণ এই পাঁচটি সর্গে কাব্যটি সমাপ্ত।
সারদামঙ্গল: সারদামঙ্গল পাঁচটি সর্গে বিভক্ত অন্তরঙ্গ কাব্য। অন্তরঙ্গ বাসিনী কাব্য লক্ষ্মীকে অন্তরে বাইরে বিচিত্র কল্পনায় যেভাবে ও যেরূপে উপলব্ধি করেছেন তাকেই রূপ দিয়েছেন সারদামঙ্গলে। এই কাব্যের বিষয়বস্তুতে মৈত্রী, প্রীতি, ও সরস্বতী বিরহের সুর ধ্বনিত হয়েছে। রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘সারদামঙ্গল এক অপরূপ কাব্য’।
সাধের আসন: সাধের আসন কাব্য টি দশটি সর্গে বিভক্ত।