উপসর্গ
উপসর্গ কাকে বলে?
যেসব অব্যয় ধাতু বা শব্দের আগে বসে ধাতু বা শব্দের অর্থের পরিবর্তন ঘটিয়ে নতুন শব্দগঠন করে, তাদেরকে উপসর্গ বলে। যেমন—প্র + ছায়া = প্রচ্ছায়া, কু + কর্ম = কুকর্ম, পরা + জয় = পরাজয়।— এখানে প্র, কু, পরা হচ্ছে উপসর্গ।
উপসর্গের বৈশিষ্ট্য
উপসর্গ বিভিন্ন শব্দ বা ধাতুর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নতুন অর্থবোধক শব্দ গঠন করে, সবসময় ধাতু বা শব্দের আগে বসে এবং উপসর্গগুলো এক একটি অব্যয়।
উপসর্গের কাজ —
উপসর্গ ধাতু বা শব্দের পূর্বে কখনো ধাতুর অর্থ প্রকাশ করে, কখনো অর্থের পুষ্টি সাধন করে, আবার কখনো শব্দের উৎকর্ষ অপকর্ষ ঘটায়।
১। নতুন অর্থবোধক শব্দের তৈরি করা।যেমন–কর্ম > অপকর্ম
২। শব্দের অর্থের পরিপূর্ণতা ঘটায়। যেমন- পূর্ণ > পরিপূর্ণ।
৩। শব্দের অর্থের সম্প্রসারণ ঘটায়। যেমন- দিন > প্রতিদিন।
৪। শব্দের অর্থের সংকোচন ঘটায়। যেমন-সাগর > উপসাগর।
৫। শব্দের অর্থের পরিবর্তন করে। যেমন- হার >প্রহার।
উপসর্গের শ্রেণীবিভাগ
উপসর্গ তিন প্রকার। যথা—(১) সংস্কৃত উপসর্গ, (২) বাংলা উপসর্গ এবং (৩) বিদেশী উপসর্গ ।
সংস্কৃত উপসর্গ
সংস্কৃতে মোট কুড়িটি উপসর্গ আছে। যেমন—প্র, পরা, অপ, সম্, নি, অব, অনু, নির্ (নিঃ), দুর্ (দুঃ),বি, অধি, সু, উদ্, পরি, প্রতি, অভি, অতি, অপি, উপ, আ।
প্র: প্রহার, প্রখ্যাত, প্রদান, প্রজন্ম, প্রক্ষেপ, প্রয়াণ, প্রপৌত্র, প্রবর্তন, প্রস্থান ইত্যাদি।
পরা: পরামর্শ, পরাজয়, পরান্মুখ, পরাক্রান্ত, পরাকাষ্ঠা, পরায়ণ ইত্যাদি।
অপ: অপকার, অপরাধ, অপচয়, অপবাদ, অপকর্ম, অপভাষা, অপসারণ, অপহরণ ইত্যাদি।
সম্: সমাবর্তন, সমাহার, সম্মুখ, সম-পূর্ণ, সমীক্ষা, সমাদর, সমুচিত, সম্মান ইত্যাদি।
নি: নিকৃষ্ট, নিষেধ, নিদান, নিক্ষেপ, নিবেশ, নিবারণ, নিদারুণ, নিরত ইত্যাদি।
অব: অবমাননা, অবচেতন, অবগাহন, অবজ্ঞা, অবরোধ, অবস্থান, অবসর, অবকাশ ইত্যাদি।
অনু: অনুচর, অনুজ, অনুতাপ, অনুরাগ, অনুক্ষণ, অনুরূপ, অনুপ্রবেশ, অনুদান ইত্যাদি।
নির্(নিঃ): নির্ধন, নির্লোভ, নির্বংশ, নিরাপদ, নিরীক্ষণ, নির্গমন, নির্ণয়, নিরক্ষর, নিঃসারণ ইত্যাদি।
দুর্ (দুঃ): দুর্দশা, দুর্বল, দুর্লভ, দুর্জয়, দুঃসাধ্য, দুর্ভিক্ষ, দুষ্প্রাপ্য, দুরাশয়, দুষ্কর ইত্যাদি।
বি: বিদেশ, বিপক্ষ, বিরাগ, বিকৃত, বিবাদ, বিজয়, বিকাশ, বিতৃয়া, বিনিদ্ৰ ইত্যাদি।
অধি: অধিকার, অধিনায়ক, অধীশ্বর, অধিপতি, অধিনায়ক, অধিবাসী ইত্যাদি।
সু : সুজন, সুপ্রিয়, সুলভ, সুচতুর, সুতীব্র, সুদুর ইত্যাদি।
উৎ : উৎকর্ষ, উচ্ছেদ, উদ্গম, উন্নতি, উৎপাদন, উৎকোচ ইত্যাদি।
পরি : পরিচয়, পরিহার, পরিণয়, পরিজন, পরিবার, পরিপূর্ণ, পরিতাপ, পরিষ্কার ইত্যাদি।
প্রতি: প্রতিবাদ, প্রতিকার, প্রতিশোধ, প্রতিরোধ, প্রতিষ্ঠান, প্রতিদান ইত্যাদি।
অভি : অভিনয়, অভিমান, অভিনন্দন, অভিশাপ, অভিসার, অভিমুখ ইত্যাদি।
অতি: অতিকায়, অতিমানব, অতিপ্রাকৃত, অত্যাচার, অতিরঞ্জন, অত্যুক্তি ইত্যাদি।
অপি: অপিনিহিতি, অপিধান।
উপ : উপকার, উপহার, উপকথা, উপনদী, উপভোগ, উপবন ইত্যাদি।
আ: আকণ্ঠ, আজীবন, আমরণ, আভাস, আসমুদ্র, আকাঙ্ক্ষা, আগমন, আবাস ইত্যাদি।
বাংলা উপসর্গ
বাংলা উপসর্গ নামপদের আগেও বসে। অ, আ, অনা, কু, নি, নির্, না, সু, বি, ভর, হা, ভরা, পাতি, স, অন, ন, নাই, দুর্, তে প্রভৃতি হল বাংলা উপসর্গ।
অ: অনড়, অফুরন্ত, অকেজো, অকথা, অধর্ম, অনিয়ম, অকর্মা, অলস, অসম, অবেলা ইত্যাদি।
অন: অনশন, অনাবশ্যক, অনস্বীকার্য, অনসূয়া।
অনা: অনাবৃষ্টি, অনাচার, অনাসৃষ্টি, অনামুখো ইত্যাদি।
আ: আচমকা, আকাল, আলুনি, আঘাটা, আকাশ, আর্কাড়া ইত্যাদি।
কু: কুরঘা, কুপুত্ৰ, কুকাজ, কুনজর, কুসা।
না: নাবালক, নামঞ্জুর, নাবালিকা ইত্যাদি।
নি/নির: নিখুঁত, নিপাট, নিখরচা, নির্ভেজাল, নির্ভুল ইত্যাদি।
বি: বিভুঁই, বিদেশ, বিমুখ, বিশুদ্ধ, বিরোধ ইত্যাদি।
স: সটান, সার, সপাট, সহিত, সঠিক, সজোর ইত্যাদি।
হা: হাঘর, হাভাত, হাপিত্যেশ ইত্যাদি।
ভরা: ভরাপেটভ ভরাডুবি, ভরানদী।
পাতি: পাতিলেবু, পাতিহাঁস, পাতিকাক, পাতিকুয়ো।
সু: সুকাজ, সুনাম, সুজর ইত্যাদি।
রাম: রামছাগল, রামনা, রামধোলাই, রামবোকা ইত্যাদি।
ন: নগণ্য, নাতিদূর।
নাই: নাইমামা।
দূর: দুর্দিন, দুর্ভাগা, দুর্দৈব, দুর্বৎসর, দুর্ব্যবহার।
তে: তেপায়া, তেমাথা, তেপান্তর, তেরঙ্গা।
বিদেশী উপসর্গ
বিদেশি উপসর্গ গুলি আরবি-ফারসি ইংরেজি প্রভৃতি ভাষা থেকে এসেছে। এই উপসর্গগুলি ধাতুর আগে না বসে বিশেষ্য ও বিশেষণ পদের আগে বসে নতুন শব্দ গঠন করে।
গর: গরমিল, গরহাজির, গররাজি, গরজমা, গরকবুলু।
বে: বে-আইনি, বে-রোজগার, বেকার, বেকায়দা, বেইজ্জত, বেরসিক, বেগতিক।
ব: বকলম।
বদ: বদনাম, বদলোক, বদমেজাজ, বদগন্ধ, বদরাগী, বদহজম। হর হররোজ, হরবোলা, হরেক, হরসাল।
নিম: নিমরাজি, নিমখুন।
ফুল: ফুলমোজা, ফুলহাতা, ফুলটাইম, ফুলবাবু।
ফি: ফিবছর, ফিসন, ফি-হপ্তা।
হাফ: হাফটিকিট, হাফহাতা, হাফটাইম।
হর: হরবোলা, হররোজ।
হেড: হেডপান্ডিতং।
সাব: সাবজজ, সাব-ডেপুটি।
মিনি: মিনি হোটেল, মিনিছাতা, মিনিখাতা।
আম: আমজনতা, আমদরবার, আম মোক্তারখানা।
কার: কারবার, কারখানা, কারচুপি।
খাস: খাসচাকর, খাসবাবুর্চি, খাসমহল, খাসকামরা, খাসতালুক।
খোশ: খোশমেজাজ, খোশগন্ধ, খোশখবর।।