কৃত্তিবাস ওঝা
কৃত্তিবাস ওঝা বাংলা ভাষায় সর্ব প্রথম এবং সর্বশ্রেষ্ঠ রামায়ণ রচয়িতা। পূর্ববঙ্গে প্রমাদ দেখা দিলে নরসিংহ ওঝা পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার গঙ্গার তীরবর্তী ফুলিয়া গ্রামে এসে বসতি স্থাপন করেন। নরসিংহের পুত্র গর্ভেশ্বর । গর্ভেশ্বরের তিনটি পুত্র হলেন মুরারি, সূর্য এবং গোবিন্দ। মুরারি ওঝার পুত্র বনমালী। বনমালীর স্ত্রীর নাম মালিনী। বনমালী ও মালিনীর ছয় পুত্র ও এক কন্যা। ছয় পুত্রের অন্যতম হলেন কৃত্তিবাস। দীনেশচন্দ্র সেনের গ্রন্থে কৃত্তিবাসের জন্ম প্রসঙ্গে বলা হয়েছে-
“আদিত্যবার শ্রীপঞ্চমী পূর্ণ মাঘ মাস।
তথি মধ্যে জন্ম লইলাম কৃত্তিবাস॥”
মহেন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় কৃত্তিবাসের জন্ম তারিখ ১৫৬৯ খ্রিস্টাব্দে বলেছেন। যোগেশচন্দ্র বিদ্যানিধি জ্যোতিষশাস্ত্র বর্ণনা করে প্রথমে বলেন ১৪৫৬ খ্রিস্টাব্দে কৃত্তিবাসের জন্ম। তিনি এরপর ‘পূর্ণ মাঘমাস’ ধরে হিসাব করে বলেন ১৪৩২ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। নলিনীকান্ত ভট্টশালীর অনুরোধে যোগেশ চন্দ্র ‘পূর্ণ মাঘমাস’ ধরে হিসেব কষে পুনরায় গণনা করে বলেন কৃত্তিবাসের জন্ম ১৩৯৮ খ্রিস্টাব্দে। দীনেশচন্দ্র ভট্টাচার্য ‘পূর্ণ মাসধরে’ জ্যোতিষ শাস্ত্র অনুযায়ী গণনা করে বলেন কৃত্তিবাসের জন্ম কাল ১৩৭২ খ্রিস্টাব্দে।
বারবছর বয়সে তিনি উত্তরবঙ্গে পড়তে যান। পাঠ শেষ করে তরুণ বয়সে তিনি যান গৌড়েশ্বরের দরবারে—
রাজ পন্ডিত হব মনে আশা করে।
পঞ্চশ্লোক ভিটিলাম রাজা গৌড়েশ্বরে।।
পঞ্চশ্লোক ভিটিলাম রাজা গৌড়েশ্বরে।।
কেউ কেউ মনে করেন তিনি রুকনুদ্দিন বরবক শাহের দরবারে গিয়েছিলেন এবং কারো মতে রাজা গণেশের দরবারে গিয়েছিলেন। কৃত্তিবাস জীবন পরিচয় প্রসঙ্গে সঠিক প্রমাণ পাওয়া না গেলেও এটুকু বলা যায় কৃত্তিবাস ছিলেন চৈতন্য পূর্ব যুগের কবি। বাল্মিকী রামায়ণ অবলম্বনে তিনি ‘শ্রীরামপাঁচালী’ রচনা করেন। কৃত্তিবাস তার মহান এই কাব্য রচনার পেছনে দুটি কারণের কথা বলেছেন—প্রথমত, পৃষ্ঠপোষক রাজার আদেশ, দ্বিতীয়ত, লোকশিক্ষার দায়িত্ববোধ। রামায়ণ সাতটি কাণ্ডে বিভক্ত— আদি বা বালকান্ড, অযোধ্যাকান্ড, অরণ্যকান্ড, কিষ্কিন্ধাকান্ড, সুন্দরকান্ড, লঙ্কাকান্ড ও উত্তরকান্ড।
১৮০২-১৮০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রীরামপুর মিশন থেকে উইলিয়াম কেরির উদ্যোগে কৃত্তিবাসের রামায়ণ ‘কীর্তিবাস রামায়ণ’ বলে মুদ্রিত ও প্রকাশিত হয়। কৃত্তিবাসের রামায়ণ গানের মত করে গীত হতে বলে তার নাম ছিল ‘শ্রীরাম পাঁচালী’। কৃত্তিবাস তার রামায়ণকে ‘লাচাড়ি’ ছন্দের পুরান বলেছেন।
মধুসূদন দত্ত কৃত্তিবাস সম্পর্কে বলেছেন—“কৃত্তিবাস কীর্তিবাস কবি, এ বঙ্গের অলংকার”