বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়

বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়



                             প্রবন্ধ

১৮৭২ সালে বঙ্কিমচন্দ্র বঙ্গদর্শনের সম্পাদক হয়ে বিভিন্ন ধরনের প্রবন্ধ রচনা করেন।  এর পরেও তিনি ভক্তদের দ্বারা সম্পাদিত ও প্রচারিত প্রবন্ধ রচনা করেন ‘প্রচার’ ‘নবজীবন’ ‘সাধারণী’ পত্রিকাতে। তাঁর প্রবন্ধ গুলি হল-
•‘লোকরহস‍্য’ (১৮৭৪) : ব‍্যাঘ্রাচার্য‍্য বৃহল্লাঙ্গুল, ইংরাজস্তোত্র, বাবু, গর্দ্দভ, দাম্পত্য দন্ডবিধির আইন, বসন্ত ও বিরহ, সুবর্ণ গোলক, রামায়ণের সমালোচন, বর্ষ সমালোচনা, কোন“স্পেশিয়ালের”পত্র, Barnsonism, হনুমদ্বাবুসংবাদ, গ্রাম্য কথা, বাঙ্গালা সাহিত্যের আদর, New Year's Day । ‌‌
লোকরহস্যলোকরহস্য বঙ্গদর্শন পত্রিকায়  প্রকাশিত হয় । ১৮৯৬ খ্রিস্টাব্দে মিরিয়াম এস্ নাইট ‘সুবর্ণ গোলক' এর অনুবাদ “The Globe of Gold” অনুবাদ করেন।
•‘কমলাকান্তের দপ্তর’ (১৮৭৫) : এই পুস্তকটির তিনটি অংশ - কমলাকান্তের দপ্তর, কমলাকান্তের পত্র এবং কমলাকান্তের জবানবন্দি। কমলাকান্তের দপ্তর বঙ্গদর্শনে প্রকাশিত হয়। কমলাকান্তকমলাকান্তের দপ্তর ইংরেজ সাহিত্যিক ও সমালোচক ডি-কুইনসির Confessions of an English Opium Eater অনুসরণে‌ রচিত।
(ক) কমলাকান্তের দপ্তর : একা–“কে গায় ওই?”, মনুষ্য ফল, ইউটিলিটি বা উদর-দর্শন, পতঙ্গ, আমার মন, চন্দ্রলোকে, বসন্তের কোকিল, স্ত্রীলোকের রূপ, ফুলের বিবাহ, বড় বাজার, আমার দুর্গোৎসব, একটি গীত, বিড়াল, ঢেঁকি।
(খ) কমলাকান্তের পত্র : কি লিখবো, পলিটিক্স, বাঙালির মনুষ‍্যত্ব, বুড়া বয়সের কথা, কমলাকান্তের বিদায়।
(গ) কমলাকান্তের জবানবন্দি: (অধ্যায় নেই)
‘মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত’ (১৮৮০) : মুচিরাম গুড়ের জীবনচরিত বঙ্গদর্শন পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এই পুস্তকটি ১৮৮৪ খ্রিস্টাব্দে পুস্তকারে প্রকাশিত হয়।
‘বিজ্ঞানরহস্য’ (১৮৭৫) : Great Solar Eruptoin (আশ্চর্য‍্য সৌরোৎপাত), Multitudes of Stars (আকাশে কত তারা আছে?), Dust (ধূলা),Aerostation (গগন পর্য‍্যটন), The Universe in Marion (চঞ্চল জগৎ),  Antiquity of Man(কত কাল মনুষ্য?), Protoplasm(জৈবনিক), Curiosities of Quantity and Measure (পরিমাণ-রহস্য), The Moon(চন্দ্রালোক)।
‘বিবিধ প্রবন্ধ’ (প্রথম ভাগ-১৮৮৭) : উত্তর চরিত,গীতিকাব্য, প্রকৃত এবং অতিপ্রকৃত, বিদ্যাপতি ও জয়দেব, আর্য‍্য জাতির সূক্ষ্ম শিল্প, দ্রৌপদী, অনুকরণ,শকুন্তলা মিরন্দা এবং দেসদিমোনা, বাঙালির বাহুবল, ভালবাসার অত্যাচার, জ্ঞান, সাংখ্যদর্শন, ভারত-কলঙ্ক, ভারতবর্ষের স্বাধীনতা এবং পরাধীনতা, প্রাচীন ভারতবর্ষের রাজনীতি, প্রাচীনা ও নবীনা।
‘বিবিধ প্রবন্ধ’ (দ্বিতীয় ভাগ-১৮৯২) : ধর্ম এবং সাহিত্য, চিত্তশুদ্ধি, গৌরদাস বাবাজির ভিক্ষার ঝুলি, কাম, বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন, ত্রিদেব সম্বন্ধে বিজ্ঞানশাস্ত্র কি বলে, বঙ্গদর্শনের পত্র-সূচনা, সংগীত, বঙ্গদেশের কৃষক, বহুবিবাহ, বঙ্গে ব্রাহ্মণাধিকার, বাঙালা শাসনের কল, বাঙ্গালার ইতিহাস, বাঙ্গালার কলঙ্ক, বাঙ্গালার ইতিহাস সম্বন্ধে কয়েকটি কথা, বাঙ্গালার ইতিহাসের ভগ্নাংশ, বাঙালির উৎপত্তি, বাহুবল ও বাক্যবল, বাঙ্গালা ভাষা, মনুষত্ব‍্য কি, লোকশিক্ষা, রামধন পোদ।
‘সাম্য’ (১৮৭৯) বঙ্গদর্শনের প্রকাশিত হয়।
‘কৃষ্ণচরিত’ (১৮৮৬) : কৃষ্ণচরিত্র ৭টি খন্ডে বিভক্ত।
প্রথম খন্ড (উপক্রমণিকা):  গ্রন্থের উদ্দেশ্য, কৃষ্ণের চরিত্র কিরূপ ছিল তাহা জানিবার উপায় কি?,  মহাভারতের ঐতিহাসিকতা -ইউরোপীয়দিগের মত, কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ কবে হইয়াছিল, পাণ্ডবদিগের ঐতিহাসিকতা- ইউরোপীয় মত, পাণ্ডবদিগের ঐতিহাসিকতা, কৃষ্ণের ঐতিহাসিকতা, মহাভারতের প্রক্ষিপ্ত, প্রক্ষিপ্তনির্বাচ্চনপ্রণালী, নির্বাচনের ফল, অনৈসর্গিক বা অতিপ্রকৃত, ঈশ্বরঈশ্বর পৃথিবীতে অবতীর্ণ হওয়া কি সম্ভব?,  পুরান,হরিবংশ,  ইতিহাসাদির পৌর্ব্বাপর্য‍্য।
দ্বিতীয় খন্ড (বৃন্দাবন) : যদুবংশ, কৃষ্ণের জন্ম, শৈশব, কৈশোর লীলা, ব্রজগোপী- বিষ্ণুপুরাণ, ব্রজগোপী- হরিবংশ, ব্রজগোপী-ভাগবত-বস্ত্রহরণ, ব্রজগোপী-ভাগবত- ব্রাহ্মণকন্যা, ব্রজগোপি-ভাগবত-রাসলীলা, শ্রীরাধা, বৃন্দাবনলীলার পরিসমাপ্তি।
তৃতীয় খন্ড (মথুরা-দ্বারোকা) : কংসবধ, শিক্ষা, জরাসন্ধ, কৃষ্ণের বিবাহ, নরকবধাদি, দ্বারোকাবাস–স‍্যমন্তক, কৃষ্ণের বহুবিবাহ।
চতুর্থ খন্ড (ইন্দ্রপ্রস্থ) : দ্রৌপদীর স্বয়ংবর, কৃষ্ণ-যুধিষ্ঠির সংবাদ, সুভদ্রা হরণ, খাণ্ডবদাহ, কৃষ্ণের মানসিকতা, জরাসন্ধবধের পরামর্শ, কৃষ্ণ-জারাসন্ধ-সংবাদ, ভীম-জরাসন্ধের যুদ্ধ, অর্ঘাভিহরণ, শিশুপালবধ, পান্ডবদের বনবাস।
পঞ্চম খন্ড (উপপ্নব‍্য) : মহাভারতের যুদ্ধের সেনোদ্যোগ, সঞ্জয়যান, যানসন্ধি, শ্রীকৃষ্ণের হস্তিনা-যাত্রার প্রস্তাব, যাত্রা, হস্তিনায় প্রথম দিবস,হস্তিনায় দ্বিতীয় দিবস, কৃষ্ণ কর্ণ সংবাদ, উপসংহার।
ষষ্ঠ খন্ড (কুরুক্ষেত্র) : ভীষ্মের যুদ্ধ, জয়দ্রথবধ, দ্বিতীয় স্তরের কবি, ঘটোৎকচবধ, দ্রোণবধ, কৃষ্ণকথিত ধর্মতত্ত্ব, কর্ণবধ, দুর্যোধনবধ, যুদ্ধ শেষ, বিধি সংস্থাপন, কামগীতা, কৃষ্ণপ্রয়াণ।
সপ্তম খন্ড (প্রবাস) : যদুবংশ ধ্বংস, উপসংহার।
‘ধর্মতত্ত্ব’ (১৮৮৮) : ধর্মতত্ত্ব ‘নবজীবন’ পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।
অধ্যায়– দুঃখ কি?, সুখ কি?, ধর্ম কি?, মনুষত্ব কি?, অনুশীলন, সামঞ্জস্য, সামঞ্জস্য ও সুখ, শরীরিকী বৃত্তি, জ্ঞানার্জ্জনী বৃত্তি, মনুষ্যের ভক্তি, ঈশ্বরে ভক্তি, ভক্তি: ঈশ্বরে ভক্তি–শাণ্ডীল‍্য, ভক্তি: ভগবতগীতা–মূল উদ্দেশ্য, ভক্তি: ভাগবত গীতা–কর্ম্ম, ভক্তি: ভাগবত গীতা–জ্ঞান,ভক্তি: ভগবতগীতা–সন্ন্যাস, ভক্তি: ধ‍্যান বিজ্ঞানদি, ভক্তি: ভাগবত গীতা–ভক্তিযোগ, ভক্তি: ঈশ্বরের ভক্তি–বিষ্ণুপুরাণ, ভক্তি: ভক্তির সাধন, প্রীতি, আত্মপ্রীতি, স্বজনপ্রীতি, স্বদেশপ্রীতি, পশুপ্রীতি, দয়া, চিত্তরঞ্জনী বৃত্তি, উপসংহার।
‘শ্রীমদ্ভাগবদগীতা’ (১২৯২) : ১২৯৫ বঙ্গাব্দে মুদ্রিত। ‘প্রচার’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়।

                  কথাসাহিত্য

বঙ্কিমচন্দ্র বাংলা সাহিত্যের সর্বশ্রেষ্ঠ ঔপন্যাসিক। পাশ্চাত্য উপন্যাস ও রোমান্সের প্রভাবে বঙ্কিমচন্দ্র সর্বপ্রথম নানা ধরনের বাংলা উপন্যাসের নির্মাণ করেন, কান্তি সংযোজনাও তাঁর অপরিসীম কৃতিত্বের পরিচয়।
বঙ্কিমচন্দ্রের প্রথম উপন্যাস ইংরেজিতে লেখা-Rajmohan’s Wife, এটি ১৮৬৪ সালের Indian Field নামে একখানি সাপ্তাহিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। এই উপন্যাসের ইংরেজি  অনুবাদ তিনি নিজে আরম্ভ করেছিলেন কিন্তু সমাপ্ত করতে পারেননি। তাঁর ভ্রাতুষ্পুত্র শচীশচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজের ‘বারিবাহিনী’ উপন্যাসের সেটুকু সংযোজন করেছিলেন। পরে বঙ্কিম-শতবার্ষিক উৎসব উপলক্ষে সজনীকান্ত দাস মহাশয় ‘রাজমোহনের স্ত্রী’ নাম দিয়ে এর অনুবাদ প্রকাশ করেন।
বঙ্কিমচন্দ্রের মোট ১৪ টি উপন্যাসকে কয়েকটি শ্রেণীতে বিভক্ত করা যায়-
(ক) ইতিহাস ও রোমান্স: এই পর্যায়ের উপন্যাস গুলি হল- ‘দুর্গেশনন্দিনী’ (১৮৬৫), ‘কপালকুণ্ডলা’ (১৮৬৬), ‘মৃণালিনী’ (১৮৬৯), ‘যুগলাঙ্গুরীয়’ (১৮৭৪), ‘চন্দ্রশেখর’ (১৮৭৫), ‘রাজসিংহ’ (১৮৮২), ‘সীতারাম’ (১৮৮৭)।
(খ) তত্ত্ব ও দেশাত্মবোধক উপন্যাস: ‘আনন্দমঠ’ (১৮৮২), ‘দেবী চৌধুরানী’ (১৮৮৪)।
(গ) সামাজিক ও পারিবারিক উপন্যাস: ‘বিষবৃক্ষ’ (১৮৭৩), ‘ইন্দিরা’ (১৮৭৩), ‘রাধারানী’ (১৮৮৬), ‘রজনী’ (১৮৭৭) কৃষ্ণকান্তেরর উইল’ (১৮৭৮)।

নবীনতর পূর্বতন