ছুটি || রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর || একাদশ শ্রেণী

 ছুটি – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর– একাদশ শ্রেণী

(sahajexam.in এর পক্ষ থেকে পশ্চিমবঙ্গ উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষাসংসদ প্রবর্তিত নতুন পাঠ্যক্রম ও নতুন প্রশ্নকাঠামো (New Curriculum and Syllabus 2024) অনুসারে একাদশ শ্রেণির Semester-II-এর ছাত্রছাত্রীদের জন্য লিখিত আদর্শ মানের বিষয়বস্তু, প্রশ্ন ও উত্তর আলোচনা করা হল। ) 


বিষয়বস্তু: রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'ছুটি' গল্পের প্রধান চরিত্র ফটিক চক্রবর্তী তথা বালক দলের সর্দারের মাথায় একটা নতুন ভাবনার উদয় হয় যে নদীর ধারে মাস্তুলে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য পড়ে থাকা প্রকান্ড একটি শালকাঠকে সবাই মিলে গড়িয়ে নিয়ে যাবে। যে ব্যক্তির কাঠ সে যখন প্রয়োজনে কাঠটি পাবে না এবং রীতিমতো বিরক্ত হবেন এসব ভেবে ফটিকের সঙ্গীরা খেলায় সম্মতি দেয় সেই সময় বাধা হয়ে দাঁড়ায় ফটিকের  ছোটো ভাই মাখন। সে গম্ভীর হয়ে সেই শালকাঠের গুঁড়ির উপর গিয়ে বসে পরেএকটি ছেলে এসে ভয়ে ভয়ে মাখনকে একটু-আধটু ঠেলেও সরাতে পারল না ফটিক ও তার বন্ধুরা যখন মাখনকে সরাতে পারল না, তখন ফটিকের মাথায় অন্য আর একটি খেলার উদয় হল আরও একটু বেশি মজার জন্য মাখনকে সুদ্ধ ওই কাঠটিকে গড়িয়ে নিয়ে যেতে চাইল। মাখন তাতে কিছুটা গৌরবান্বিত হলেও তাতে যে বিপদ রয়েছে তা কেউ বুঝতে পারেনিকাঠের গুঁড়ি একপাক ঘুরতে না ঘুরতেই সে মাটিতে পড়ে যায়। তৎক্ষণাৎ মাখন মাটি থেকে ওঠে গিয়ে দাদার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে,  অন্ধভাবে দাদাকে মারতে থাকে এবং মাখন বাড়ি দিকে চলে খেলা ভেঙে যায়।

 ফটিক  যখন নৌকার গলুইয়ের উপর বসে কাশ চিবাতে লাগল সেই সময় একটি বিদেশী নৌকা ঘাটে এসে দাঁড়ায়। নৌকা থেকে অর্ধবয়সি  কাঁচা গোঁফ ও পাকা চুল ভদ্রলোক নামেন এবং ঘাটে বসে থাকা ফটিককে জিজ্ঞাসা করেন, "চক্রবর্তীদের বাড়ি কোথায়।” ফটিক কোনো দিক নির্দেশ করে তা কারও সঠিক বোধগম্য হয় কিনা সন্দেহ। ইতিমধ্যে বাঘা বাগদি ঘাটে এসে ফটিককে বলপূর্বক কোলে করে বাড়িতে নিয়ে যায়। ফটিককে দেখামাত্র তার মা অগ্নিমূর্তি ধারণ করেন এবং অভিযোগ করেন যে সে মাখনকে পুনরায় কেন মেরেছে। ফটিক পালটা জবাব দেয়, সে মাখনকে মারেনি। মাখন নিজে তখন জানায় যে, ফটিক তাকে মেরেছে। সেই রাগে ফটিক মাখনের গালে চড় কষিয়ে দেয় সেই সময় ফটিক মাকে ঠেলে ফেলে। ফটিক ও মাখনের মা চিৎকার শুরু করেন এবং ঠিক সেই মুহূর্তে বিশ্বম্ভরবাবু ঘরে প্রবেশ করেন।

বিশ্বম্ভরবাবু পশ্চিমে কাজের সূত্রে ব্যস্ত থাকায় বোনের সঙ্গে বহুদিন যোগাযোগ রাখতে পারেননি। বোনের দুই পুত্রসন্তানের জন্ম দেওয়া এবং স্বামীর মৃত্যু কোনোক্ষেত্রেই তিনি পাশে এসে দাঁড়াতে পারেননি। তাই তিনি বহুদিন পরে দেশে ফিরেই বোনকে দেখতে আসেন। বিশ্বম্ভরবাবু বাড়ি ফিরে যাওয়ার দু-একদিন আগে বোনকে ফটিক ও মাখন সম্বন্ধে কিছু জিজ্ঞাসা করলে জানায় যে ফটিকের উচ্ছৃঙ্খলতা, পড়াতে অমনোযোগ এবং বিপরীতে মাখনের সুশান্ত সুশীলতা ও বিদ্যানুরাগের কথা। সেসব শুনে বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে কলকাতায় নিজ গৃহে নিয়ে গিয়ে পড়াশোনা করানোর প্রস্তাব দেন। ফটিকের মা রাজি হয়। অবশেষে ফটিক ঘুড়ি, ছিপ মাখনকে দিয়ে মামার বাড়ির উদ্দেশ্যে খুশি মনেই যাত্রা করে।

বিশ্বম্ভরবাবু ফটিককে নিয়ে কলকাতায় বাড়িতে পৌঁছোলে অনাবশ্যক পরিবার বৃদ্ধিতে মামি অসন্তুষ্ট হন। কারণ, তাঁর নিজেরও তিনটি ছেলে রয়েছে। গ্রাম্য বছর তেরোর একটি গ্রাম্য, অচেনা, অপরিচিত বিশ্বম্ভরবাবুর স্ত্রীর অপছন্দ ফটিক তা সহজেই বুঝতে পারে। মামির সামান্য স্নেহের আশায় সে মামির না বলা কাজ করে দিয়েও প্রশংসা পায়নি, বরং পেয়েছে অনাদর, অবহেলা, তিরস্কার।

ফটিক মামার বাড়িতে অনাদর, অবহেলা, তিরস্কারে একেবারে বদলে যায়।বিমুখ শহর এবং স্নেহহীনা মামি ফটিকের জীবন অতিষ্ঠ করে তোলে। স্কুলেও মন বসাতে পারপারে না ফটিক। নির্বোধ ও অমনোযোগী ছাত্র হয়ে মাস্টারমশাইয়ের তীব্র তিরস্কারের ভার ক্লান্ত গাধার মতো সে সহ্য করত। মামাতো ভাইরা তার সঙ্গে সমস্ত সম্বন্ধ অস্বীকার করত এবং ফটিকের যে-কোনো অপমানে তারা আমোদ প্রকাশ করত। ফলে শহরে মামার বাড়িতে স্নেহ-ভালোবাসা বিচ্যুত জীবন থেকে মুক্তি পেতে, ফটিক বাড়ি ফিরতে চায় মামার কাছে বাড়ি যাওয়ার কথা বললে সে জানতে পারে কার্তিক মাসে পূজার ছুটি হলে তবে যেতে পারবে। তারপর বহু প্রত্যাশিত ছুটির জন্য অপেক্ষা করতে থাকে। একদিন স্কুলের বই হারিয়ে ফেলে জ্বর গায়ে মুশলধারে শ্রাবণের বৃষ্টিতে বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে।পুলিশ অবশেষে অর্ধচেতন অবস্থায় ভিজে কর্দমাক্ত শরীরে ফটিককে বিশ্বম্ভরবাবুর বাড়িতে দিয়ে যায়। বিশ্বম্ভরবাবু প্রায় কোলে করে বাড়ির ভিতরে নিয়ে আসেন তাকে। ক্রমে জ্বর অত্যন্ত বাড়তে থাকে। সারারাত্রি প্রলাপ বকতে থাকে ফটিক। বিশ্বম্ভরবাবু চিকিৎসককে খবর দেন।চিকিৎসকও জানান ফটিকের অবস্থা ভীষণ খারাপ। ফটিক জ্বরের ঘোরে বলতে থাকে "মামা, আমার ছুটি হয়েছে কি"। পরবর্তী দু-দিনে অবস্থার আরও অবনতি হলে বিশ্বম্ভরবাবু বোনকে খবর দেন তারপর ফটিকের মা এসে পৌঁছোলেন দাদার বাড়িতে। শহরের চারদেয়ালের বন্দিত্ব থেকে ছুটি চেয়েছিল সে। এখন জীবন থেকে ছুটি নিতে সে মরিয়া। পৃথিবীর কোনো ভালোবাসার টানই তাকে আর বাঁধতে পারল না। তবে ফটিক ততক্ষণে জীবন থেকে ছুটির সাড়া পেয়েছে


ভাব সম্মিলন- বিদ্যাপতি 📌📌

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন