ণত্ব-বিধান ও ষত্ব-বিধান
বাংলা বানান
উচ্চারণের সময় বানান
বিভ্রাট শোনা
না গেলেও লেখার সময়
বানান নিয়ে
গোলমাল বাধে।
সঠিক বাংলা
বানান লেখা
নিয়ম ণত্ব-বিধান
ও ষত্ব-বিধান। বাংলা ব্যঞ্জন
বর্ণের ট-বর্গের
পঞ্চমবর্ণ মূর্ধন্য
ণ বাংলা
ভাষায় নিজস্ব
উচ্চারণ হারিয়ে
ফেলেছে। ণ
এখন ত-বর্গের
পঞ্চমবর্ণ দন্ত্য
ন এর
মতো উচ্চারণ
হয়। মূর্ধন্য
ণ ও
দন্ত্য ন
উচ্চারণে ও
শ্রবণে কোনো
অসুবিধা হয়
না কিন্তু
লেখার সময়
মূর্ধন্য ণ
ও দন্ত্য
ন নিয়ে
সমস্যায় পড়তে হয়। সেইরকম শ ষ
স তিনটি উষ্মবর্ণের উচ্চারণ এখন
শ-এর উচ্চারণের
মতো। লেখার
সময় এই
তিনটি বর্ণ
নিয়ে বানান-বিভ্রাট দেখা দেয়। বেশি বিভ্রান্ত ঘটে
স ও
ষ-কে
নিয়ে। কোথায়
ষ-এর ব্যবহার
হবে সেই
নিয়মই হল
ষত্ব-বিধান।
ণত্ব-বিধান
ণত্ব-বিধান : যে নিয়মে বাংলা বানানে কোন্ কোন্ স্থানে দন্ত্য ন
পরিবর্তিত হয়ে মূর্ধন্য ণ হয়, সেই
নিয়মকে ণত্ব-বিধান বলে। তদ্ভব, দেশী বা বিদেশী শব্দে এ নিয়ম প্রয়োগ করা নয়। নিয়মগুলি
হল।—
(১) ঋ, র্, ষ্—এই তিনটির যেকোনো একটির পর দন্ত্য ন থাকলে মূর্ধন্য ণ হয়।
ঋণ, তৃণ, ঘৃণা, কর্ণ, বর্ণনা, স্বর্ণ, বিষ্ণু,
সহিষ্ণু, মসৃণ, কৃষ্ণ, কৃষ্ণায়ন ইত্যাদি।
(২) ঋ, র্, ফ্-এর পরেই
যদি দন্ত্য ন না থাকে, যদি ঋ, র্, ষ্ এবং দন্ত্য ন-এর মাঝখানে কোনো স্বরবর্ণ,
ক-বর্গ বা প-বর্গের কোনো বর্ণ অথবা য্, ব্, হ্, ং থাকে, তখন দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ
হইয়া যায়। রণ (র্ + অ + ণ), রুগ্ণ (র + উ + গ্ + ণ), পাষাণী, লক্ষণ, রেণু,
রুক্মিণী, ঘ্রাণ, আঘ্রাণ, মুদ্রণ
ইত্যাদি।
(৩) সমাসবদ্ধ
করার সময় একপদে ঋ, র্, য, আর অন্যপদে দন্ত্য ন থাকলে পদ দুইটি একপদে পরিণত হলে দন্ত্য ন আর মূর্ধন্য ণ হয় না। যেমন- দুর্নাম, হরিনাম, বীরাঙ্গনা, পুরাঙ্গনা,
শ্রীনিবাস, নরনারায়ণ, ত্রিনয়না, ভিক্ষান্ন, পরান্ন, আশ্রবন, সর্বনাম, পিতৃনাম,
বরানুগমন, নির্নিমেষ ইত্যাদি।
কিন্তু সমাসবদ্ধ পদটিতে কোনো
ব্যক্তি বা বস্তুর নাম বোঝালে দন্ত্য ন মূর্ধন্য ণ হয়। শূর্পণখা, অগ্রহায়ণ
ইত্যাদি।
(৪) প্র, পরা, পূর্ব,
অপর—এই চারিটি শব্দের পর অহ্ন শব্দের দন্ত ন মূর্ধন্য ণ হয়। প্রাহু, পরাহ্ণ
পূর্বাহ্ণ, অপরাহ্ণ। কিন্তু সায়াহ্ন, মধ্যাহ্ন, আহ্নিক ইত্যাদি শব্দ এই সূত্রের নিয়মে হয়
না বলে দন্ত্য ন-ই থাকে।
(৫) প্র, পরা, পরি,
নির্ উপসর্গের পর মূর্ধন্য ণ হয়। প্রণত, প্রণাম, প্রণয়ন, প্রণব, পরায়ণ, পরিমাণ, পরিণীতা, নির্ণয়, নির্ণীত ইত্যাদি।
কিন্তু প্রনষ্ট ন আর ণ হয় না।
(৬) ট-বর্গের কোনো বর্ণের পূর্বে নাসিক্যবর্ণের
প্রয়োজন হলে সবসময় মূর্ধন্য ণ
হবে। যেমন- ঘণ্টা, কণ্টক,
দণ্ডায়মান, ক্ষুণ্ন।
(৭) পদের শেষে দন্ত্য
ন কখনও মূর্ধন্য ণ হয় না। শ্রীমান্, ব্রহ্মন্, শৰ্মন্, আয়ুষ্মান্ ইত্যাদি।
(৮) তদ্ভব, দেশী ও
বিদেশী শব্দের বানানে ঋ, র্, স্-এর পরে দন্ত্য ন লেখা প্রয়োজন। অগ্রহায়ণ—অঘ্রান ; কর্ণ—কান; স্বর্ণ–সোনা ; বর্ণ—বরন; কোণ—কুনো ; গণনা—গনা ;
বর্ষণ—বরিষন ইত্যাদি।
ষত্ব-বিধান : যে নিয়মের দ্বারা দন্ত্য স কোন্ কোন্ স্থানে মূর্ধন্য ষ
হয় তা জানা যায়, তাকে ষত্ব-বিধান বলে। তৎসম
শব্দেই এই ষত্ব-বিধান প্রযোজ্য।
(১) অ-কার ও আ-কার ছাড়া
অন্য স্বরবর্ণের পরে এবং ক্
ও র্-এর পরে প্রত্যয় ও বিভক্তির দন্ত্য স্ মূর্ধন্য ষ্ হয়। যেমন—ভবিষ্যৎ,
পরিষ্কার, পুস্করিণী, আবিষ্কার, বিভীষণ, ঋষি, কৃষ্ণ, বিষম, সুষমা, মাতৃত্বসা, শ্রীচরণেষু, কল্যাণীয়েষু, দুর্বিষহ ইত্যাদি।
(২) ই-কারান্ত ও
উ-কারান্ত উপসর্গের পরে সদ্ সিচ্ সন্জ্ সিব্ সেব্ স্থা প্রভৃতি কয়েকটি ধাতুর
দন্ত্য স মূর্ধন্য ষ হয়। যেমন—উপনিষৎ, বিষণ্ণ, নিষণ্ণ, অনুষঙ্গ, আনুষঙ্গিক,
অভিষিক্ত, নিষিদ্ধ, প্রতিষেধক, পরিষেবিকা, প্রতিষ্ঠিত, অনুষ্ঠান, ইত্যাদি।
(৩) সাৎ প্রত্যয়ের স
কখনও ষ হবে না।— অগ্নিসাৎ, ধুলিসাৎ, ভূমিসাৎ (ই-কারের পরে থাকা সত্ত্বেও)।
(৪) শিসধ্বনিযুক্ত ট
ও ঠ-এর অব্যবহিত পূর্বে ষ হয়। —অষ্ট, কষ্ট, কষ্টি, বেষ্টন, নিষ্ঠুর, দৃষ্টি,
যুধিষ্ঠির, প্রতিষ্ঠান, ভূমিষ্ঠ ইত্যাদি।
(৫) স্ফুট্ ও স্ফুর্ ধাতুতে
স-ই হবে।—পরিস্ফুট, বিস্ফোটক, বিস্ফোরণ, বিস্ফুরিত।
(৬) ইংরেজী st-এর স্থানে বাংলা স্ট লেখাই প্রয়োজন। — স্টেশন, মাস্টার, স্টার, স্টোর্স, অগস্ট, স্টাইল, স্টেটব্যাঙ্ক, ইনস্টিটিউশন
; (ব্যাতিক্রম খ্রীষ্ট, খ্রীষ্টাব্দ)।