ধর্মমঙ্গল কাব্যের কবি ঘনরাম চক্রবর্তী

ঘনরাম চক্রবর্তীর ধর্মমঙ্গল কাব্য

অষ্টাদশ শতাব্দীর (চৈতন্য-পরবর্তী) ধর্মমঙ্গল কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবিআনুমানিক ১৭১১ খ্রীস্টাব্দে ঘনরামের ধর্মমঙ্গল রচনা করেন তাঁর কাব্যের শেষে গ্রন্থের রচনার সময়সীমা নির্দেশ করতে গিয়ে লিখেছেন—


সঙ্গীত আরাম্ভকাল নাহিক স্মরণ।

শুন সবে যে কালে হইল সমাপন।।

শক লিখে রামগুণ রস সুধাকর।

মার্গকাছ অংশে হংস ভার্গব বাসর।।

সুলক্ষ বলক্ষ পক্ষ তৃতীয়ার্খ্য তিথি।

যাম সংখ্যা দিনে সাঙ্গ সঙ্গীতের পুঁথি।।

 

নিবাস- বর্ধমান জেলার কইয়ড় পরগণার কৃষ্ণপুর গ্রাম কবি বলেছেন- 'কইয়ড় পরগণা বাটী কৃষ্ণপুর গ্রামে'।

কবির পিতার নাম গৌরীকান্ত এবং মাতা হলেন সীতা দেবী, পিতামহ- ধনঞ্জয়, প্রপিতামহ- পরমানন্দ ঘনরামের চার পুত্র রামরাম, রামগোপাল, রাম গোবিন্দ, রামকৃষ্ণ

ঘনরাম কীর্তিচন্দ্রের সভাকবি ছিলেনতাঁর আদেশ ঘনরাম ধর্মমঙ্গল কাব্য রচনা আত্মনিয়োগ করেন

রামপুরের তিনি পড়াশোনা করেন

গুরু রামদাস ঘনরামকে কবিরত্ন উপাধি দেন

ঘনরামের কাব্য- অনাদিমঙ্গল (অন্যনাম-শ্রীধর্মসংগীত মধুরভারতী)

২৪টি পালায় বিভক্ত, শ্লোক ৯১৪৭টি। ধর্মমঙ্গলের কাহিনী দুটি-হরিশচন্দ্র-লুই চন্দ্রের কাহিনী এবং লাউসেনের কাহিনী

ঘনরামের ধর্মমঙ্গল কাব্যের শুরুতে আছে দেবদেবীর বন্দনা, ইছাই ঘোষের আখ্যান, রঞ্জাবতীর সঙ্গে কর্ণসেনের বিবাহ, হরিশ্চন্দ্র ও লুইচন্দ্রের আখ্যান, ধর্মঠাকুরের কাছে রঞ্জাবতীর পুত্রবর লাভ, লাউসেনের জন্ম, চণ্ডী কর্তৃক লাউসেনের পরীক্ষা, দেবীর অস্ত্রে ফলা নির্মাণ, লাউসেন ও কর্পূর সেনের গৌড়যাত্রা, লাউসেনের ব্র্যাঘ্র হত্যা, ছলনাময়ী নারীর হাত থেকে লাউসেনের উদ্ধার, লাউসেনের হাতী হত্যা, লাউসেনের কামরূপ যাত্রা, কামরূপ রাজের সঙ্গে লাউসেনের যুদ্ধ, রাজকন্যা কলিঙ্গাকে বিবাহ, কানডাকে লাউসেনের বিবাহ, লাউসেনের লোহার গণ্ডার দ্বিখণ্ডিকরণ, মহামদের বিচিত্র চক্রান্ত, লাউসেনের দ্বারা ইছাই ঘোষ হত্যা, পাপে ভরাট হয়ে যাওয়া গৌড়ে প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টি, বন্ধ করার জন্য লাউসেনের পশ্চিমে সূর্যোদয় দেখাবার কঠিন সাধনা, মহামদের লাউসেনের রাজধানী আক্রমণ এবং পরাজিত হয়ে লাউসেনের পলায়ন, কঠিন সাধনার ফলে লাউসেনের পশ্চিমে সূর্যোদয় দেখানো ঘটনা, পাপের জন্য মহামদের কঠিন পীড়া, লাউসেনের স্বর্গে গমন ইত্যাদি অজস্র ঘটনা কৃতিত্বের সঙ্গে অঙ্কন করেছেন

তাঁর কাব্যে বিভিন্ন পুরান, উপপরাণ এবং ভাগবত থেকে আখ্যান সংগ্রহ করেছেন

ধর্মমঙ্গলকে রাঢ়ের জাতীয় কাব্য বলা হয়

গতানুগতিক কাহিনিতে ঘনরাম সচেতন শিল্পকুশলতার পরিচয় দিয়েছেন। রুচি ও পরিমিতিবোধ তাঁর কাব্যে লক্ষণীয়। ঘনরামের কাব্য গ্রাম্যতাদোষ মুক্ত এবং চরিত্রসৃষ্টিতেও তিনি সফল।

নবীনতর পূর্বতন